a

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি গুলিতে নিহত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি

 গাজায় ত্রাণ কেন্দ্রে গুলিতে নিহত ৭০০-এর বেশি: বিতর্কিত জিএইচএফ প্রকল্প নিয়ে উত্তাল বিশ্ব

ইসরায়েলি অবরোধে ধুঁকতে থাকা গাজার মানুষের জন্য সাহায্যপ্রাপ্তির চেষ্টাই এখন তাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। গাজার বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্য সংগ্রহ করতে এসে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন শত শত ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, এসব ঘটনায় ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার জন আহত হয়েছেন।


শনিবার (৫ জুলাই) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তা নিতে গিয়ে অন্তত ৭৪৩ জন নিহত এবং ৪,৮৯১ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে কারণ অনেক এলাকায় এখনও সঠিক তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি।


আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, "এই সংখ্যাগুলো রক্ষণশীল অনুমান। প্রকৃতপক্ষে, বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্যের জন্য লাইনে অপেক্ষা করা অনেক বেশি মানুষের প্রাণ গেছে কিংবা তারা আহত হয়েছেন।"


গাজা সিটি থেকে সরাসরি রিপোর্ট করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী অবরোধে গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের মতো ন্যূনতম চাহিদাও মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে খাদ্য সংগ্রহে ছুটে যাচ্ছে যেকোনো সম্ভাব্য উৎসে।


> "অনেক মা তাদের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেরা না খেয়ে থাকছেন। অনেকে তিন-চার দিনেও এক বেলা খাবার পাচ্ছে না। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। পুরো গাজায় যেন একটি মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছে," — বলেন মাহমুদ।




জিএইচএফ, একটি কথিত আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা, গত মে মাসের শেষ দিকে গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। তবে সংস্থাটির কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই তা বিতর্ক, সমালোচনা এবং প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে।


মার্কিন সমর্থিত প্রকল্পে প্রশ্নের মুখে মানবিকতা


একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জিএইচএফ পরিচালিত বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ফিলিস্তিনি সহায়তাপ্রার্থীদের ইচ্ছেমতো গুলি এবং স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হচ্ছে। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন ঠিকাদারের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, “ত্রাণ নিতে আসা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হচ্ছে।”


জিএইচএফ এসব অভিযোগ 'সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন' এবং 'মিথ্যা' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা তাদের বিতরণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে 'অত্যন্ত সতর্ক' এবং সব ধরনের নিয়ম মেনেই সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও তহবিল


বিতর্কের মধ্যেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জিএইচএফ-এর পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “জিএইচএফই একমাত্র সংস্থা যারা গাজার জনগণের কাছে বাস্তব সহায়তা পৌঁছে দিতে পেরেছে।”


জুনের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটিকে ৩০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে।


মার্কিন কর্মীরাও হামলার শিকার


৫ জুলাই শনিবার, খান ইউনিসে জিএইচএফ-এর একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে দুই মার্কিন কর্মী আহত হন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং চিকিৎসা চলছে। তবে এ হামলার জন্য কে দায়ী, সে বিষয়ে কোনো পক্ষই এখনও নিশ্চিত নয়।


মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিন্দা ও আহ্বান


অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জিএইচএফ প্রকল্পকে ‘অমানবিক ও প্রাণঘাতী সশস্ত্র পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন জিএইচএফ-এর তাত্ক্ষণিক বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই সংস্থা ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র ও বিপজ্জনক এলাকায় নিয়ে গিয়ে জীবন বিপন্ন করছে।


> “প্রতিদিনই সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এই প্রকল্প মানুষকে বাঁচাতে নয়, বরং একটি নিয়ন্ত্রিত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে,” — অভিযোগ করে একটি মানবাধিকার সংস্থা।



M/happybanglamedia


Keyword :

Gaza aid attackH, F controversy, ইসরায়েল গুলিতে নিহত, ফিলিস্তিনি সহিংসতা,Gaza humanitarian crisis,ডোনাল্ড ট্রাম্প, Gaza

Amnesty International, GHF gaza relief center shooting, জিএইচএফ বিতর্ক, গাজায় খাদ্য সংকট


No comments

Powered by Blogger.