জুলাই সনদের প্রতিবাদস্বরূপ কক্সবাজারে গিয়েছি : হাসনাত
জবাবে তিনি জানান, জুলাই মাসে প্রণীত ঘোষণাপত্র ছিল অসম্পূর্ণ। এতে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী, শহীদ পরিবার ও আহতদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি তাদের ন্যূনতম সম্মান জানানো হয়নি, যা খুবই বেদনাদায়ক। ঘোষণাপত্রে এমন কিছু বক্তব্য যুক্ত হয়েছে যা অভ্যুত্থানের মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উদাহরণস্বরূপ, সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার যে ইঙ্গিত এসেছে, তা অসত্য এবং মূল দাবি থেকে সরে আসার শামিল। আমরা বরাবরই একটি নতুন গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পক্ষে কথা বলে এসেছি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ৪ আগস্টের একটি অনুষ্ঠানে আন্দোলনের অনেক আহত, শহীদ পরিবার এবং প্রকৃত নেতৃত্বদানকারীদের বাদ দেয়া হয়েছে। এটিকে রাজনৈতিক ও নৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে হয়েছে। ঐ অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত তিনি ব্যক্তিগতভাবে নেন। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন, এবং গণমানুষের প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে একাংশের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়, সেখানে উপস্থিত থাকা তার পক্ষে সমীচীন ছিল না।
হাসনাত জানান, ৪ আগস্ট রাতে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। পরে মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীকে ভ্রমণের বিষয়ে অবহিত করেন এবং আহ্বায়ককে জানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিছুক্ষণ পর তাকে জানানো হয় যে বিষয়টি আহ্বায়ককে জানানো হয়েছে এবং তিনি সম্মতি দিয়েছেন। এরপর সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই সফর কোনো সামাজিক ভ্রমণ নয়; বরং রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে ভাবার সুযোগ ছিল। কক্সবাজারের সাগরপাড়ে বসে তিনি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, দলের কাঠামো ও একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান গঠনের রূপরেখা নিয়ে চিন্তা করেছেন। এটি রাজনৈতিক কর্মীর জন্য দায়িত্বশীল মানসিক অনুশীলনের অংশ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে সফরের সময় একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব ছড়ানো হয় যে, তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। তিনি এই খবরকে "সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পরিকল্পিত অপপ্রচার" হিসেবে অভিহিত করেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, সেখানে পিটার হাস নামে কেউ অবস্থান করছিলেন না। পরে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে ছিলেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেন, এই অপপ্রচার তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটি ষড়যন্ত্র। অতীতে তিনি বহুবার এই হোটেলে থেকেছেন, কখনও বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। তিনি মনে করেন, শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয় এবং তার সফর সাংগঠনিক নীতিমালার পরিপন্থী ছিল না।
শেষে তিনি লেখেন,
“ঘুরতে যাওয়া কোনো অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস সব সময় কেবল সভা-সমাবেশে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে কিংবা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি এই জবাব প্রদান করছি।”

No comments