বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের কার্যক্রম শুরু: নতুন দিগন্তের সূচনা


ঢাকা, ২০ জুলাই ২০২৫: বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের (OHCHR) অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।[1][2][3][4] এই পদক্ষেপটি দেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের এক তদন্তে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় এক হাজার চারশ'র বেশি মানুষকে হত্যার তথ্য উঠে আসার পর থেকেই ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের অফিস খোলার বিষয়টি আলোচনায় আসে।[5][6][7] পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘ পর্যালোচনার পর সরকার এই অফিস স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং জাতিসংঘের পক্ষে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।[2][8][9] এই চুক্তির ফলে, প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস কাজ করবে।[1][9] গুলশানের ইউএন হাউজ থেকে এই অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।[10]

এই অফিস স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেইসব দেশের তালিকায় যুক্ত হলো যেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের কার্যক্রম চালু রয়েছে, যেমন কম্বোডিয়া, ইয়েমেন, সুদান, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, লাইবেরিয়া এবং ফিলিস্তিনসহ অন্তত ১৬টি দেশ।[9][10]

বিশেষজ্ঞদের মতামত

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার মতে, দেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারত, তবে এই অফিসের প্রয়োজন হতো না।[10] তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশনগুলো সক্রিয় থাকলেও তদন্তের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অনীহা ছিল। এই অফিস চালুর ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা হলেও ব্যবস্থা নিতে সচেষ্ট হবে বলে তিনি মনে করেন।[10]

অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, অনেক দেশেই মানবাধিকার হাইকমিশনের হস্তক্ষেপ করার প্রবণতা দেখা যায়, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।[10] তবে, বাংলাদেশে এমনটি ঘটবে কিনা তা নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ সরকারের সঙ্গে সংস্থাটির সম্পর্কের ওপর। তিনি আরও বলেন, এই অফিসের উপস্থিতি সরকারকে কর্তৃত্ববাদী হওয়া থেকে বিরত রাখতে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে, এই ভাবনা সরকারের মধ্যে কাজ করবে।[10]

বিশ্লেষকদের মতে, এই অফিসের উপস্থিতির ফলে অতীতে যারা রাষ্ট্রীয় বা সরকারি নির্দেশে গুম-খুনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত থেকেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল, তারা এখন সতর্ক হবে।[10] পূর্বে ഇത്തരം অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘকে তথ্য না দেওয়া এবং তাদের কর্মকর্তাদের দেশে আসার অনুমতি না দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

চুক্তির মেয়াদ ও ভবিষ্যৎ

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, এই অফিস তিন বছরের জন্য কাজ করবে।[9] এরপর এর মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা, তা তৎকালীন সরকার এবং দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।[10] এই উদ্যোগ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে সংস্কার ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন বলে সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।[11] একইসাথে সরকার স্পষ্ট করেছে যে, এই মিশন দেশের প্রথাগত, আইনি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে কোনো সামাজিক এজেন্ডা প্রচারে ব্যবহৃত হবে না এবং জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলে সরকার সমঝোতা থেকে সরে আসার অধিকার রাখে।

 

এম/হ্যাপি বাংলা মিডিয়া 

No comments

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.